চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীদাসখালী গ্রামে নির্মাণের এক মাসের মধ্যেই একটি সেতুতে ফাটল ধরেছে। ধসে গেছে সেতুর অংশ বিশেষ। বেরিয়ে পড়েছে রড। খুলে পড়েছে পাথন ও সিমেন্ট। বালুসহ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তড়িঘরি নির্মাণ কাজ শেষ করার ফলে সেতুর এই হাল হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সেতুর ডিজাইনও পরিবর্তন করা হয়েছে ইচ্ছে মতো।
তবে কাজ কিনে নেওয়া চাটমোহরের প্রভাবশালী ঠিকাদার বলেছেন, কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে মাটি ফেলার কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। কেন তড়িঘরি মাটি ফেলা হলো- তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজসে সিডিউল বহির্ভূতভাবে কোন রকমে কাজ শেষ করে সিংগভাগ টাকা পকেটস্থ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। এদিকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠণ করেছেন।
জানা গেছে, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৯ টাকা ব্যয়ে শ্রীদাসখালী-রাউৎকান্দি সড়কের জাফরের জমির সামনে ৩২ ফুট দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণের কাজ পায় সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মেসার্স সাজেদা এন্ড আতাহার নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা কাজটি করেনি।
সেতুটি নির্মাণের জন্য সাব কন্ট্রাক্ট নেয় চাটমোহরের প্রভাবশালী ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম। কাজের শুরুতেই এলাকাবাসী নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ করতে থাকলে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু সাব ঠিকাদার ও পিআইও তাতে কোন কর্ণপাত করেননি। বরং নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সেতুর বেশীরভাগ কাজ রাতের আঁধারে সম্পন্ন করা হয়েছে। অতি নিম্নমানের বালু ব্যবহার করা হয়েছে। পরিমাণ মতো বালু ও সিমেন্ট মিশ্রণ না করেই ঢালাই করা হয়েছে। সেতুর নিচে রড় সিমেন্ট দিয়ে আরসিসি ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও কাঠের উপর ঢালাই দেওয়া হয়েছে। রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া সেতুর দু’পাশের সংযোগ সড়কে মাটি ফেলা হয়নি। ফলে শ্রীদাসখালী, রাউৎকান্দি ও আব্দুলপুর গ্রামের মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। জোড়াতালি দিয়ে নির্মিত সেতুর সিংহভাগ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। একাধিক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন পিআইও প্রতিটি সেতু থেকে মোটা টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকেন। টাকা না দিলেই ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে হয়রানী করা হয়।
এ ব্যাপারে মূল ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও চাটমোহরের সাব ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি কী বলবো। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ সত্য নয়। আমি ও পিআইও স্যার সেতুটি দেখে এসেছি। পিআইও ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছেন। যেহেতু জুন কোজিং ছিলো,তাই তড়িঘড়ি মাটি ফেলা হয়। তাই কিছু অংশে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কার্যসহকারী মোঃ আঃ কাদের জানান, কোন ব্রিজেরই ঢালাই কাজের বিষয়ে তার জানা নেই। অভিযোগের বিষয়ে পিআইও স্যারকে বলা হলেও তিনি চুপ থাকেন। তিনি বলেন, সিরাজুল ইসলাম কাটেঙ্গা ও শ্রীদাসখালী সেতুতে নিম্নমানের বালু ব্যবহার করার পাশাপাশি খোয়া, বালু ও সিমেন্ট পরিমাণ মতো দেয়নি। আমি বললেও কর্ণপাত করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম শামীম এহসান বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সেতুর ফাটল অংশ দেখেছি। ঢাকায় কথা বলা হয়েছে। ঠিকাদারকে ত্রুটিপূর্ণ কাজ মেরামত করে দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পরই আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকাবাসী নিম্নমানের কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দূর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।