নাজিম হাসান,রাজশাহী থেকে : রাজশাহী মহানগরীর শাহ মাখদুম থানার সামনে নিজের গায়ে আগুন দেওয়া এক কলেজ ছাত্রী চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে মৃত্যু করন করেছে। এর আগে স্বামীর নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গিয়ে শনিবার শাহ মাখদুম থানার সামনেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহুতি দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। নিহত লিজা গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রধানপাড়া এলাকার আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের পালিত মেয়ে। সে রাজশাহী মহিলা কলেজের বাণিজ্য দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
লিজার সহপাঠীরা জানান, লিজা বেশ কেছুদিন আগে এক ছাত্রের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেন। তার স্বামীর নাম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার খানদুরা গ্রামের খোকন আলীর ছেলে এবং রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। সাখাওয়াত হোসেন পরিবারকে না জানিয়ে লিজাদের গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে গত ২০ জানুয়ারি তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও পরে কলহ দেখা দেয় তাদের সংসার জীবনে।
পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় সাখাওয়াত লিজাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেননি। এক পর্যায়ে সাখাওয়াত লিজার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। গত জুলাই মাসে প্রধম দিকে লিজা সাখাওয়াতের খোঁজে ছুটে যান চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের গ্রামের বাড়িতে। এসময় সাখাওয়াত বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে লিজা নাচোল থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ সাখাওয়াত ও তার বাবাকে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে লিজাকে পাঠিয়ে দেন। এরপর তারা কয়েকদিন একসঙ্গে থাকেন।
পরে সাখাওয়াত রাজশাহীতে ফিরে আবারও স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কয়েকদিন পর লিজার সঙ্গে দেখা করতে আসে সাখাওয়াত ও তার ভগ্নীপতি। তারা উভয়েই লিজাকে মারধর করেন এবং এবিষয়ে থানায় অভিযোগ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন লিজাকে। সেই থেকে লিজা নগরীর শাহ মখদুম থানায় অভিযোগ দেয়ার চেষ্টায় গত কয়েকদিন ধরে ঘুরছিলেন। লিজার বন্ধুরা জানান, তিনি শনিবার দুপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আবারও শাহ মখদুম থানায় যান। সেখানে ডিউটি অফিসারকে অনেকবার অনুরাধ করেন তার অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য। ডিউটি অফিসা অভিযোগ রেকর্ড না করায় লিজা নিরুপায় হয়ে ওসির সঙ্গে শেষে দেখা করেন।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে পাগল বলে পাত্তা না দিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। এসময় লিজা থানা থেকে বের হয়েই কাছের একটি দোকান থেকে কেরোসিন কিনে থানার সামনে আসেন। সেখানে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। মুহূর্তের লিজার শরীর পুড়ে যায়। এসময় আশপাশের লোকজন ঘঁনাস্থলে ছুটে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভায়। পরে প্রায় অচেতন অবস্থায় লিজাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পাচদিন যাবত মৃত্যুও সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে বুধবার সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই তরুণী।