শিরোনামঃ

আজ শনিবার / ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / গ্রীষ্মকাল / ১১ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৩রা জিলকদ ১৪৪৫ হিজরি / এখন সময় বিকাল ৪:৩৩

রাজশাহী বাগমারায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে গোশত বিক্রি

নাজিম হাসান, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলাসহ হাট-বাজার ও এর আশেপাশের এলাকায় রোজার মাসে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে গরু ছাগলের মাংস। এতে ওই সব এলাকার পরিবেশ ব্যাপক দূর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায় এসব গরু ছাগলের জবাইকৃত আবর্জনা ও মলমূত্র রাস্তা ঘাটে পড়ে থেকে সেখান থেকে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পথচারীদের চলাচলে মারাত্বক সমস্যার সৃষ্টি করছে। অনেকে নাকে রুমাল দিয়ে ওই সব এলাকা অতিক্রম করতে বাধ্য হচ্ছে।

উপজেলার সদর থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে লাইসেন্স বিহীন অবৈধ মাংস ব্যবসায়িরা ভোরে লোকজন চলাচলা শুরু হওয়ার আগে রাস্তায় ফেলে গরু ছাগল জবাই শুরু করে। তারা জবাইকৃত এসব গরু ছাগলের মাংস রাস্তার পাশেই উন্মুক্ত স্থানে টাঙ্গিয়ে বিক্রয় শুরু করে। দিনব্যাপি তারা দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও রাস্তার ওপরে জবাইকৃত পশুর আবর্জনা ঠিকমত পরিস্কার না করায় সেখান থেকে পরবর্তীতে ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়ায়।

স্থানীয় ক্রেতাদের অভিযোগ, তারা ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগেই এসব গরু ছাগল জবাই করা হয়। সেগুলো রোগাক্রান্ত কিনা তাও তাদের দেখার বা জানার কোন সুযোগ থাকে না। সম্পূর্ণটা অনুমানের ওপর নির্ভর করে তাদের মাংস কিনতে হয়। আর লাইসেন্স বিহীন কসাই হওয়ায় তাদের পশু গুলোও প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে পরীা করে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তবে কসাইরা তাদের জবাইকৃত পশুর গুনমান সম্পন্ন ও রোগ মুক্ত দাবি করে বলেন, বাজারের নির্ধারিত কসাই খানায় তাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। সেখানকার কসাইখানা সিন্ডিকেটের দখলে। সেখানে তাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় গরু ছাগল জবাই করে ফুটপাতের উন্মুক্ত স্থানে ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

জানা গেছে, একটি গরু স্বাভাবিকভাবে খাবারের উপযুক্ত হতে ১৩ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা একটি গরুকে ইনজেকসন ও ওষুধ সেবন করে ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে মোটা-তাজা করে বিক্রি করছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে যে ওষুধ প্রয়োগ করে তা খুবই তিকর। এতে গরু যেমন দ্রুত মোটা ও নাদুসনুদুস হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনে বিষক্রিয়ার ফলে দ্রুত মৃত্যুর দিকেও এগিয়ে যায়। এই ওষুধ শুধু পশুর মৃত্যুর কারণ তা নয় এসব গরুর মাংস খেয়ে মানুষেরও বিভিন্ন রোগের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। জানা গেছে,গরু ব্যবসায়ীদের অনেকই স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে গরুকে মোটা করে থাকে।

এ জাতীয় ওষুধ যেমন-ডেক্সামেথাসন,ডেকাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে গরুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ায় শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না। এ কারণে শোষিত হয়ে পানি সরাসরি গরুর মাংসে চলে যায়। ফলে গরু অল্প দিনে মোটা হয়ে যায়। বাগমারার তাহেপুর হাটে একটি মাংসের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি গরুর মাংস ঝোলানো রয়েছে। পাশে মোটা-তাজা একটি গরুও রয়েছে। ওই মাংস শেষ হলে এ গরুটিকে জবাই করা হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান,রাজশাহী নগরীর সিটিহাট থেকে দুটি গরু এনেছেন। একটি জবাই করে বিক্রি করছেন। আরেকটি পরে জবাই করা হবে। এ গরুটিতে কোনো ধরনের সমস্যা আছে কি না তা পরীা করিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,কেন পরীা করবো। আপনি দেখতেই পাচ্ছেন গরুটি কি সুন্দর মোটা-তাজা। এর আবার কিসের পরীা করতে হবে। অনেক মাংস ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ক্রয় করছে। এবং দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল মাংস। রাজশাহীতে পাচ’শত অধিক মাংসের দোকান রয়েছে।

এসব দোকানের অধিকাংই গরু,মহিষ, ভেড়া এবং ছাগলের মাংস বিক্রি করছে। খেত্রে বেশি চাহিদার কারণে বিক্রেতার কাছে গরুর মাংসকে মহিষ এবং ভেড়ার মাংসকে খাসির মাংস বলে গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারা না জেনেই দেদারছে ক্রয় করছে এসব মাংস।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Share via
Copy link
Powered by Social Snap