নুরুল ইসলাম, চাটমোহর অফিস : আমাকে না জানিয়ে কত জনের সাথে প্রেম করেছো আমি শুনে বিশ্বাস করি নাই। আসলে তুমি এতো খারাপ আমি মেনে নিতে পারছি না। তোমাকে আমি মরার কথা বললেও তুমি বলো মরো তাতে নাকি তোমার ভালো। তাই মরে তোমার ভাল করে দিয়ে গেলাম। মৃত্যুর আগে লেখা সুইসাইড নোটে এমনটাই লিখেছেন পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের কালিসাগরপাড় এলাকার সুব্রত দাসের ছেলে শুভ দাস। গত মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আত্মহত্যা করে শুভ। টগবগে সুদর্শন এ ছেলেটির আত্মহত্যার কারণ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন ছিল কি কারণে শুভ আত্মহত্যা করেছে। চেনা পরিচিত সবার মনে যখন এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন শুভর নিজের হাতে লেখা ১২ পৃষ্টার একটি সুইসাইড নোট এ প্রতিবেদকসহ অনেকের হাতেই পৌছে গেছে। সুইসাইড নোটে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট লেখা রয়েছে। এ সুইসাইড নোটে আত্মহত্যার জন্য শুভ তার প্রেমিকা এবং প্রেমিকার মাকে দায়ী করেছেন।
সুইসাইড নোটে শুভ দাস তার প্রেমিকার বিরুদ্ধে প্রতারণার অনেক অভিযোগ এনেছেন। তার প্রেমিকা তার সাথে প্রেমের নামে অভিনয় করে বারবার ঠকিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। সুইসাইড নোট পরে জানা যায়, প্রেমিকার উপর অভিমান করে ক্ষোভে-দু:খে অভিমানে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে শুভ। প্রথম পাতার শুরুতেই প্রেমিকার নাম লেখা রয়েছে। এর পর লেখা আছে, ‘তুমি আমার সাথে এরকম করলা কেন। আমি তো তোমায় ঠকাই নাই। তুমি যা বলতা তাই শুনতাম, কোনো মেয়ের সাথে কথাও বলতাম না। তুমি মানা করতা, সিগারেট খেতাম না। কোনো নেশা পানি করতাম না। তাইলে সবাইকে তুমি মিথ্যা কেন বলছো যে, আমি ভাল না, নেশা খোর। তুমি যা চাইতা তাই দিতাম। ৪-৫ বছর আমাকে ব্যবহার করে গেলা। এতো স্বপ্ন দেখাইছো কেন ?
সুইসাইড নোটের বিভিন্ন স্থানে শুভর প্রেমিকা অন্য আরো কয়েকজন ছেলের সাথে প্রেম করতো উল্লেখ করে তার সাথে রাগ-অভিমানের কথা উল্লেখিত হয়েছে। পাবজী গেম খেলার জন্য সুইসাইড নোটে উল্লেখিত প্রেমিকাকে ৩০ হাজার টাকায় মোবাইল কিনে দিয়েছে শুভ। প্রেমের নামে শুভকে বারবার ঠকিয়েছে তার প্রেমিকা। সিদুর দিয়ে, মালা বদল করে বিয়ে করে গোপনে অনেক রাত তারা একসাথে কাটিয়েছে। প্রেমিকার মা সব জানতো। তাকে বাড়ির সব কাজে ব্যবহার করতো বলে উল্লেখ রয়েছে এ সুইসাইড নোটে। শুভ এতদিন সত্যটা না জানলেও সম্প্রতি যখন জানতে পারে তার প্রেমিকা সত্যি সত্যি অনেকের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছে তখন এনিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। মৃত্যুর দু সপ্তাহ পূর্বেও আরেকবার শুভ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। সে যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পায় সে। চার দিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিল। প্রেমিকা তাকে একবারও দেখতে যায়নি। তার প্রেমিকা সেসময় থেকে তার সাথে কথা বলা, যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ফোনে বøক করে রাখে। শুরুজিত, পার্থ ও সৌম্যকে ভাই সম্বোধন করে শুভ লিখেছে, ভাই আমার বাবা, মা, বোনের খেয়াল রাখিস। আর তোরা তো সব সত্যি কথা জানিস। সবাক বলে দিস।
শেষের পাতায় শুভ লিখেছে, ‘তোমাকে সত্যি পাগলের মতো ভালবাসতাম। তুমি দাম দিলা না। শুধু ব্যবহারই করে গেলা মা-মেয়ে মিলে। তুমি ও তোমার মা দায়ী আমার মৃত্যুর জন্য।’
এ প্রসঙ্গে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুভ দাসের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। সুইসাইড নোট জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।